গোদাগাড়ী (রাজশাহী) প্রতিনিধি :
রাজশাহী জেলার গোদাগাড়ী পৌরসভাসহ উপজেলায় ব্যাঙের ছাতার মতো গড়ে উঠেছে ফার্মেসি। ওই সব ফার্মেসীর অনেক মালিক নিজের নামটি লিখতে কলম ভাঙ্গে অথচ ডাক্তার সেজে ঔষুধ ও ব্যবস্থা পত্র দিয়ে থাকেন। রোগ মুক্তি নয় ওষুধ বিক্রি যেন তাদের মুখ্য উদ্দ্যেশ্য।
অনেক সময় এমবিবিএস ডাক্তারগণ রোগীর অবস্থা বুঝে নামীদামী কোম্পানীর ঔধুষ প্রেসক্রিপশনে লিখলেও ওই সব অর্ধশিক্ষিত, অপ্রশিক্ষিত ওষুধ বিক্রেতারা বেশী লাভের আশায় ডাক্তারের লিখা ওষুধ পরিবর্তনও করে দিচ্ছেন অহরহ। তারা নিজেরা ডাক্তার সেজে ঔষুধ ও প্রেসক্রিপশন দিয়ে থাকেন। তাই ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা দিনে দিনে বৃদ্ধি পাচ্ছে আশাংকাজনকভাবে।
ডাক্তারী পরামার্শ ছাড়া ওষুধ সেবন করে অকালে মৃত্যু হয়েছে এমন নজীরবিহীন ঘটনাও গোদাগাড়ীতে ঘটছে। কয়েক বছর পূর্বে গোদাগাড়ীর রেলওয়ে বাজার নামক স্থানে কথিত মইদুল ডাক্তারের ক্লিনিকে ডাক্তার ছাড়াই এক মায়ের অপারেন্স করায় ওই মায়ের মৃত্যু হয় এবং এর প্রতিবাদে ক্লিনিক ভাংচুর করা হয়। কথিত ডাক্তার মইদুলকে গোদাগাড়ী মডেল থানা পুলিশ প্রেফতার করলেও পরবর্তীতে তাকে রহস্যজনক কারণে ছেড়ে দেয়া হয়।
ফার্মেসীর মালিকগণ ঔষুধকে মনে করেন খাদ্যদ্রব্য, আলু, পটল কিংবা বেকারী পুন্য। বিক্রি করতে পারলেই হয়। অনেক মেয়াদ উর্ত্তীন ওষুধ, স্যাম্পল রেখে বিক্রি করা হয়েছে দেদারসে। এমনকি কোম্পানীর নির্ধারিত মূল্যের উপর ওভার রাইটিং করে ৫০ থেকে ২০০ টাকা পর্যন্ত কলম দিয়ে লিখে বিক্রি করা হচ্ছে ।
দেখার যেন কেউ নেই। ভ্রাম্যমান আদালত অভিযান পরিচালনার খবর পৌছা মাত্রই গোদাগাড়ী পৌরসভার ফিরোজচত্তর,, হাটপাড়া, সুলতানগজ্ঞ, মহিশালবাড়ী, সিএন্ডবি, রেলবাজার, মাওলানার গেট, উপজেলার রেলগেট, হাজীরমোড, হরিসংকরপুর, পিরিজপুর, বিদিরপুর, প্রেমতলী, কুমুরপুর, রাজাবাড়ী, কাঁঠালতোলা, কামারপাড়া, বাসুদেবপুর, বালিয়ঘাটা, কাঁকনহাট, ২৪নগর প্রভূতি এলাকার ২ শতাধিক ফর্মেসীর মলিক দোকান লাগিয়ে পালিয়ে যায় বলে ব্যাপক অভিযোগ রয়েছে।
যতক্ষন অভিযান চলে ততক্ষুন দোকান বন্ধ থাকে এ প্রসঙ্গে ভুক্তভোগী ও সচেতন মহলের অভিযোগ যে সব ফর্মেসীর মালিক দোকান বন্ধ রেখে পালিয়ে যাবে তাদেরকে ২০/২৫ হাজার টাকা জরিমানা করলে ভেজাল, নিন্মমানের ভারতীয় ওষুধ, মেয়াদ উর্ত্তীন ওষুধ, ওভার রাইটিং করে বেশী মূল্যে ওষুধ বিক্রি চিরতরে বন্ধ হতো। কোম্পানী ওষুধের দাম বৃদ্ধি না করলেও ফার্মেসীর মালিকগন ইচ্ছা মাফিক দাম হাকাচ্ছেন, প্রশ্ন করলে ওষুধ বিক্রি নেই বলে তখন ক্রেতা সাধারন উপায়হীনভাবে কোম্পানীর নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে বেশী কিনতে বাধ্য হচ্ছেন। আইন থাকলেও এর বাস্তব প্রয়োগ না থাকায় কিংবা শাস্তির বিধান কম হওয়ায় এ সব অবৈধ কারবার চলছে দেদারসে।
নাম প্রকাশ না করা শর্তে একজন এমবিবিএস ডাক্তার এ প্রতিবেদককে জানান, প্রেসক্রিপশন ছাড়া ওষুধ বিক্রি করা একেবারেই উচিৎ নয়। ওষুধ বিক্রেতা ও ক্রেতাকে বুঝতে হবে ওষুধ কোন খাদ্য দ্রব্য নয় এটি মূলত এক ধরনের বিষাক্ত দ্রব্য। নিয়মমাফিক ব্যবহার না করলে যা জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্বক হুমর্কী হয়ে দাঁড়ায়। এতে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার স্বীকার হচ্ছে অনেক রোগী।
ডাক্তারী পরামার্শ ছাড়া এক রোগের ওষুধ খেতে গিয়ে অন্য একটি রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঘটনাও ঘটছে। গোদাগাড়ীর বিভিন্ন ফার্মেসী গুলিতে সরজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, ঔষুধ বিক্রির কাজে জড়িতদের শতকরা ৯৫ ভাগেরই ওষুধ সম্পর্কে ভাল ধারনা নেই। ফলে ঔষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সম্পর্কে রোগীরা ধারনা পায় না। তারা ডাক্তারী প্রেসক্রিপশন চাওয়ার প্রয়োজনীয়তা অনুভাব করে না। ক্রেতা দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে নাম উল্লেখ করে ওষুধ চাইলে ফার্মেসীর মালিকগণ ওষুধ বিক্রি করে থাকেন। আবার অনেক দিনের মেয়াদোর্ত্তীর্ন পুরানো প্রেসক্রিপশন নিয়ে অনেক রোগী ফার্মেসীতে আসলে প্রেসক্রিপশনের তারিখ ওষুধ সেবন করার সময়সীমা দেখার প্রয়োজনবোধও করেন না বিক্রেতাগন।
তাদের কাছে আর্থিক বানিজ্যই যেন মুখ্য বিষয়। অথচ আমাদের পার্শ্ববতী রাষ্ট্র ভারতে ডাক্তারী প্রেসিক্রিপশন ছাড়া কোন ওষুধ বিক্রি করেন না ফর্মেসীর মালিকগণ যদি সারা দিনে তাদের ফার্মেসীতে ওষুধ বিক্রি হউক আর না হউক।
এদিকে বেশীর ভাগ ডাক্তারগণ কোম্পানীগুলোর বিভিন্ন রকমারী দামী উপঢোকনের (দামী উপহার সামগ্রী) কারণে রোগী দেখার চেয়ে বেশী সময় ব্যয় করে থাকেন কোম্পানী রিপ্রেজেন্টিভদের (প্রতিনিধিদের) সাথে। রোগী অসুখে কিংবা, পেট ব্যথায় ছটপট করলেও ডাক্তারদের মন এতোটুকু গলে না এখানে রোগী গৌন আর ওষুধ বিক্রয় প্রতিনিধি মূখ্য শুধু মাত্র দামী উপহার সামগ্রীর কারণে। গোদাগাড়ী মডেল হাসপাতাল, জেনারেল হাসপাতাল, সততা ইসলামী হাসপাতালে দীর্ঘ লাইনে ঔষুধ কম্পানী গুলির প্রতিনিধিদের উপহার সামগ্রী নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যান। এছাড়া ডাক্তারের রুম থেকে রোগির স্বজনেরা বের হওয়ার মাথে সাথে প্রেসক্রিপশন নিয়ে টানাটানি শুরু করে দেন, ছবি তুলেন, কোন কম্পানীর ঔষুধ নিখেছেন, তারটা আছে কিনা, এ যেন রোগির লোকজন ও ঔষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিদের এক সংঘর্ষ।
অত্যন্ত দুঃখজনক হলেও বাস্তব সত্য ডাক্তারী রোগী দেখা ফি এর উপর সরকার যে ভ্যাট বসিয়েছেন সেটির টাকাও রোগীদের নিকট থেকে গ্রহন করা হচ্ছে। এ অবৈধ কারবারটি জেলা শহর, পৌরসভা, উপজেলা ও জেলা শহরের নামীদামী ডাক্তারগণও করছেন নিজেদের খেয়াল খুশি মতো। শুধু কি তাই ডাক্তারদের সিরিয়্যাল দেওয়ার জন্য উৎকোচ দিতে হচ্ছে১শ ৫০শ থেকে ২ শ টাকা। ভুক্তভোগী সচেতন মহলের দাবী জরুরী ভিক্তিতে এদের বিরুদ্ধে এদের বিরুদ্ধে কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহনের।