মঙ্গলবার, ১৪ জানুয়ারী ২০২৫, ০৭:১৯ অপরাহ্ন
ক্রপ জোনিং প্রকল্পের খামারি মোবাইল অ্যাপের কার্যকারিতা মাঠপর্যায়ে যাচাই করেছেন কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিব ওয়াহিদা আক্তার।
শুক্রবার সকালে চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুর উপজেলার পার্বতীপুর ইউনিয়নের শেরপুর গ্রামে এই অ্যাপের কার্যকারিতা যাচাই করেন তিনি। এসময় তিনি বলেন, কৃষির সমৃদ্ধিতে ক্রপ জোনিং উৎপাদনশীলতা বাড়াতে সহায়ক ভূমিকা পালন করছে। ফসল ও মাটি নির্বাচন করে চাষাবাদ করা হলে অধিক ফলন পাওয়ার সুযোগ রয়েছে।
কৃষি সচিব বলেনÑ প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা অনুযায়ী বাংলাদেশ হবে স্মার্ট দেশ, তাই স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে প্রত্যেককে প্রস্তুতি নিতে হবে, সেইসাথে যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে কৃষকদেরও প্রস্তুতি নিতে হবে। তিনি বলেনÑ সরেজমিনে মাঠে এসে খামারি অ্যাপসটি কিভাবে কাজ করে সেটি দেখলাম। খামারি অ্যাপসটির ব্যাপারে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ২০২১ সালে ৪ ফেব্রুয়ারি নির্দেশনায় বলেছিলেন ক্রপ জোনিংয়ের মাধ্যমে এটা ম্যাপিং করতে হবে। সে নির্দেশনার পরিপ্রেক্ষিতে আমরা কৃষি গবেষণা কাউন্সিলকে বলেছিলাম এবং তারা কৃষি গবেষণা ফাউন্ডেশনের অর্থায়নে ক্রপ জোনিং অ্যাপসটি তৈরি করেছে। র্যানডম ব্যাসিকে কৃষকের জমিটা বেছে নিয়েছি। এই জমিতে এসে খামারি অ্যাপসের আইকনে আমরা প্রথমে ক্লিক করলাম। তারপর অপশন চলে আসল, আমি কি জানতে চাই, কোথায় আছি। বললাম রাজশাহী ডিভিশনের চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার গোমস্তাপুর উপজেলায়। ক্লিক করে করে আমরা এগোচ্ছি। তারপর আমি যেখানে অবস্থান করছি স্যাটেলাইট অ্যাপসের মাধ্যমে সেটা দেখছে। দেখে বললাম যে আমরা গোমস্তাপুর উপজেলার এই জমিতে কি কি ফসল হতে পারে তা দেখছি। আমি গম ফসলের মধ্যে দাঁড়িয়েছিলাম। তখন সে বলল বারি গম-৩৩। বারি গম-৩৩ ক্লিক করে বললাম কি পরিমাণ সার দিতে পারি, সেই সুপারিশ চলে এসেছে। একটা কৃষকের ফসল উৎপাদনের জন্য যত ধরনের পরামর্শ প্রয়োজন যেটা উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা দিয়ে থাকেন। সেটা এখন অ্যাপসের মাধ্যমে পেয়ে যাচ্ছি। অ্যাপসটি বাংলায় করা আছে যাতে কৃষকরা সহজেই বুঝতে পারে। এখন অনেক কৃষকের স্মার্ট ফোন আছে। যদি এই অ্যাপসটি ব্যবহার করা শিখে যায় তাহলে তারা নিজের সিদ্ধান্ত নিজে নিতে পারবেন। আমি এখানে এসে চমৎকৃত হলাম। আগে পুরো বরেন্দ্র অঞ্চল খা খা করত। বরেন্দ্র অঞ্চলে এখন আর জমি ফাঁকা থাকছে না। এ স্লোগানটি মানুষের মনে গেঁথে গেছে। সরিষা, গম, পেয়ারা, ড্রাগনসহ বিভিন্ন ধরনের ফসল রাস্তা দিয়ে আসার সময় দেখলাম। বিভিন্ন ধরনের ফসলে ভরপুর। যার যেটুকু জমি আছে কিছু না কিছু অন্তত উৎপাদনে চেষ্টা করছে।
সচিব বলেন, স্মার্ট বাংলাদেশের অন্যতম হাতিয়ার হলেন আমাদের কৃষক। কৃষকরা খাদ্য ব্যবস্থার হাল ধরে রেখেছেন। খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনে এবং দেশের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতকণে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে সরকার কৃষিবান্ধব নীতি অনুসরণ ও বাস্তবায়ন করছে। ফলশ্রুতিতে দেশের কৃষক এর সুফল ভোগ করছে। প্রাকৃতিক সম্পদের যথাযথ ব্যবহারের মাধ্যম উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধির পাশাপাশি কৃষকের জীবনযাত্রার মানও উন্নয়ন হচ্ছে। খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনে ক্রপ জোনিং গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। এসময় সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আম রপ্তানির জন্য ভ্যাপার হিট ট্রিটমেন্ট মেশিন আনার প্রক্রিয়া চলছে। যার মাধ্যমে এ জেলার আম বিদেশে রপ্তানি সহজ হবে।
পরে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিল ও মৃত্তিকা সম্পদ উন্নয়ন ইনস্টিটিউটের আয়োজনে বারি গম-৩৩ এর প্রদর্শনী ট্রায়ালের মাঠদিবস অনুষ্ঠিত হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন ক্রপ জোনিং প্রকল্পের কো-অর্ডিনেটর ও সদস্য পরিচালক (শস্য) ড. মো. আবদুছ ছালাম। প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন, কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিব ওয়াহিদা আক্তার। বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন, বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিলের নির্বাহী চেয়ারম্যান ড. শেখ মোহাম্মদ বখতিয়ার। অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন, গোমস্তাপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) আসমা খাতুন, কৃষক ময়েন আলী ও শাহিন আকতার।
এসময় চাঁপাইনবাবগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক ড. পলাশ সরকারসহ কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।