বৃহস্পতিবার, ০১ Jun ২০২৩, ০৫:৪৭ অপরাহ্ন
নিজস্ব প্রতিনিধি :
রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপক ড. রফিকুল ইসলাম সেখের উপাচার্য থাকার মেয়াদ শেষ হয় গত বছরের ৩০ জুলাই। এর এক দিন পর শিক্ষা মন্ত্রণালয় রুয়েটের ফলিতবিজ্ঞান ও মানবিক অনুষদের ডিন ড. সাজ্জাদ হোসেনকে রুয়েটের দায়িত্বপ্রাপ্ত উপাচার্য করা হয়। আট মাস পার হয়ে গেলেও উপাচার্য নিয়োগ হয়নি। দায়িত্বপ্রাপ্ত ভিসি ড. সাজ্জাদ হোসেন চালাচ্ছেন রুয়েট।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক রুয়েটের একজন জ্যেষ্ঠ শিক্ষক জানান, গতবছরের ১২ আগস্ট খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) উপাচার্যের মেয়াদ শেষ হয়। এরপর এক অধ্যাপককে ভারপ্রাপ্ত ভিসির দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। পরে ১ সেপ্টেম্বর কুয়েটের ভিসি নিয়োগ হয়ে গেছে। অথচ কুয়েটের আগে রুয়েটের ভিসির মেয়াদ শেষ হলেও এখন পর্যন্ত নতুন ভিসি নিয়োগ হয়নি। নানামুখী তদবিরের কারণে মন্ত্রণালয় এখনো কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারছে না।
রুয়েটে ভিসি হওয়ার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন ডজনখানেক অধ্যাপক। তাদের মধ্যে প্রথম দফায় চেষ্টা করা কয়েকজনও আছেন। নতুন করে ভিসি প্রার্থী হিসেবে যাদের নাম শোনা যাচ্ছে তারা হলেন – ইন্ডাস্ট্রিয়াল অ্যান্ড প্রোডাকশন ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক মোশাররফ হোসেন ও গ্লাস অ্যান্ড সিরামিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের প্রধান অধ্যাপক শামীমুর রহমান।
এ ছাড়া প্রথম থেকেই ভিসি হওয়ার দৌড়ে আছেন সাবেক ভিসি যন্ত্রকৌশল বিভাগের অধ্যাপক রফিকুল আলম বেগ, সদ্য সাবেক ভিসি ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের রফিকুল ইসলাম সেখ, যন্ত্র কৌশল বিভাগের অধ্যাপক নীরেন্দ্রনাথ মুস্তফী, একই বিভাগের এমদাদুল হক ।
ভিসি হওয়ার চেষ্টায় থাকা এসব অধ্যাপকের বিভিন্নজনকে নিয়ে নানা রকম বিতর্ক আছে। সাবেক দুই ভিসি রফিকুল আলম বেগ ও রফিকুল ইসলাম শেখ আবারও ভিসি হওয়ার চেষ্টা করলেও তাদের নিয়ে বিতর্কের শেষ নেই। নানা অনিয়ম, দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতির মাধ্যমে চাকরি দেয়ার অভিযোগ রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে।
সম্ভাব্য প্রার্থী কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ড. শহীদুজ্জামানের বিরুদ্ধেও রয়েছে বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের অভিযোগ। প্রফেসর ড. মো. শহীদ উজ জামান রুয়েটের ইন্সটিটিউট অব কোয়ালিটি এ্যাসুরেন্স সেল (আইকিউএসি) এর অতিরিক্ত পরিচালক হিসেবে থাকাকালীন সময়ে রুয়েটে সিসি টিভি ক্যামেরা স্থাপন কাজের তদারককারী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।
জানা যায়, প্রফেসর ড. মো. শহীদ উজ জামান সিসি টিভি ক্যামেরাসহ অন্যান্য যন্ত্রপাতি ক্রয়ে আর্থিক অনিয়মের সাথেও জড়িত ছিলেন। উক্ত কাজের জন্য তিনি নিম্নমানের সিসি টিভি ক্যামেরাসহ অন্যান্য যন্ত্রপাতি ক্রয় করেছিলেন, যার ফলে অধিকাংশ সিসি ক্যামেরা নষ্ট হয়ে যায়। যে কারণে প্রশাসন ভবনে লাগানো সিসি ক্যামেরার সামনে থেকে রুয়েটের সিকিউরিটি অফিসের এক মাষ্টাররোল কর্মচারীর (তপন) সাইকেল চুরি হয় অথচ সিসি টিভি ক্যামেরা দ্বারা চোর সনাক্ত করা সম্ভব হয়নি।এছাড়া, তার বিএনপি-জামায়াতের রাজনীতির সাথে সখ্য থাকার অভিযোগও রয়েছে। যদিও তিনি এ অভিযোগ এর আগে অস্বীকার করেছেন।
ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিকস বিভাগের শিক্ষক প্রফেসর ড. ফারুক হোসেন রুয়েট গবেষণা সম্প্রসারণের পরিচালকসহ রুয়েট শিক্ষক সমিতির সভাপতি তিনি। তার বিরুদ্ধে রুয়েটে নিয়োগ ও লাইব্রেরিতে ফটোকপি বই ক্রয়ে অনিয়মের সঙ্গে জড়িত থাকারও অভিযোগ রয়েছে। তার আত্মীয়সহ বিএনপি-জামায়াত সমর্থিত একাধিক ব্যক্তিকে অর্থের বিনিময়ে চাকরি দিতে সহযোগিতা করার অভিযোগও রয়েছে।
ভিসির দৌড়ে থাকা ড. শামীমুর রহমান সাবেক উপাচার্য সিরাজুল করিম চৌধুরীর আমলে ছাত্রকল্যাণ উপদেষ্টা ছিলেন। শামীমুর রহমানের বিরুদ্ধেও ক্ষমতার অপব্যবহার, স্বেচ্ছাচারিতা ও বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের অভিযোগ রয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের মঞ্জুরি কমিশনের সদস্য ড. আবু তাহের জানান, রুয়েটে উপাচার্য নিয়োগে স্বচ্ছ ব্যক্তি খোঁজা হচ্ছে। ভালো কাউকে খুঁজতে সময় লাগছে। উপাচার্য নিয়োগ হয় শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে। উপাচার্য হতে অনেকেই চাইতে পারেন, কিন্তু হবেন একজন। উপাচার্য খোঁজা মন্ত্রণালয় কাজ করছে। দ্রুতই উপাচার্য নিয়োগ হবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি। সুত্র – সাহেব বাজার ডটকম।