মঙ্গলবার, ০৫ ডিসেম্বর ২০২৩, ০২:১১ পূর্বাহ্ন
পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বলেছেন, ‘আমরা এখন নির্বাচনী পরিবেশ বা ইলেকশন মুডে চলে এসেছি। সেদিকে আমরা মনোযোগ দিতে চাই। তফসিল ঘোষণার পর দেশে যে উৎসাহ-উদ্দীপনা সৃষ্টি হয়েছে, তাতে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেউ বাধাগ্রস্ত করতে পারবে না।’
রোববার (১৯ নভেম্বর) জাতীয় প্রেস ক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে ‘নির্বাচন এবং গণতন্ত্র : দক্ষিণ এশিয়ার দৃষ্টিকোণ’ শীর্ষক আইডিডিবি আয়োজিত সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি আরো বলেন, ‘প্রত্যেকটি নির্বাচনে প্রতিটি রাজনৈতিক দলের ভূমিকা অপরিসীম। তাদের নির্বাচনে আসার যেমন অধিকার রয়েছে; আবার নির্বাচনে অংশ না নেওয়ারও অধিকার রয়েছে।’
নির্বাচনে সব রাজনৈতিক দল অংশগ্রহণ করবে বলে আশা প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘যারা এই নির্বাচনী যাত্রায় অংশগ্রহণ করবে না তারা বাদ পড়ে যাবে। এটা ২০১৪ সাল থেকে শুরু হয়েছে। তারা (বিএনপি) তখন দেশে ও তাদের প্রভুদের কাছে সমালোচিত হয়েছে। ২০১৮ সালে তারা একটা গল্প তৈরি করার চেষ্টা করেছিল, কিন্তু সেটির উপসংহার লিখতে পারেনি। তাদের সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রক্রিয়া গণতান্ত্রিক নয়।’
পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘অনেকেই সরকারের আন্তর্জাতিক বিষয় নিয়ে কথা বলতে চেষ্টা করেন। কিন্তু সরকার সেই জায়গা তৈরি করেছে যাতে এমন কিছু না হয়। তারপরেও সরকার অনেক কিছুকে স্বাগত জানাচ্ছে। তবে ভবিষ্যতে বাংলাদেশের জনগণ ও রাজনৈতিক দল যা ভাবছে, সেভাবে দেশ পরিচালনা করা হবে।’
বিএনপির সমালোচনা করে তিনি বলেন, ‘বিএনপির সময়ে বাংলাদেশকে যেভাবে জঙ্গিবাদের রাজধানী বানানোর চেষ্টা করা হয়েছিল, তারই ধারাবাহিকতায় ভারতের একজন বিদ্রোহী নেতা ঢাকার সিটি করপোরেশন নির্বাচনের কাউন্সিলর নির্বাচিত হয়েছিলেন। নির্বাচিত হয়ে তিনি পাকিস্তানে গিয়েছিলেন পরামর্শ করতে।’
তিনি বলেন, ‘২০১৮ সালেও বিএনপি একটি গল্প লিখেছিল। কিন্তু উপসংহার লিখতে পারেনি। এবারও তারা উল্টোপথে নিতে চেয়েছিল। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী তা থামিয়ে দিয়েছেন।’
প্রতিমন্ত্রী আরও বলেন, ‘অতীতে বিএনপির নির্বাচন বর্জনের সিদ্ধান্ত দেশে-বিদেশে এমনকি তাদের ‘বিদেশি প্রভুরাও’ ব্যাপক সমালোচনা করেছেন। বিএনপির কিছু সমর্থক গভীরভাবে হতাশ এবং তারা দলের অগণতান্ত্রিক দৃষ্টিভঙ্গিতে কোনো ভবিষ্যৎ দেখতে পাচ্ছে না।’
পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশের মানুষ এখনো ঔপনিবেশ মানসিকতা থেকে বেরিয়ে আসতে পারেনি। এখানকার অধিকাংশ মানুষ দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে বিদেশি হস্তক্ষেপ কামনা করে। বিদেশি উপদেশ ছাড়া আমরা চলতে পারি না, কাজ করতে পারি না- এমন মনোভাব থেকে বের হয়ে আসতে হবে। দক্ষিণ এশিয়ার গণতান্ত্রিক নির্বাচন ব্যবস্থা কতটা সুখকর, তা আমরা সার্কভুক্ত দেশ আফগানিস্তান ও পূর্ব এশিয়ার দেশ মিয়ানমারের দিকে তাকালে বুঝতে পারি। সেই তুলনায় বাংলাদেশের নির্বাচন ব্যবস্থা অনেক স্বচ্ছ এবং সুন্দর।’
তিনি বলেন, ‘গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতায় নির্বাচনি ব্যবস্থায় দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে ভারত শতভাগ সফল হয়েছে। সেখানে অনেক হেভিওয়েট প্রার্থীরাও নির্বাচনে হেরেছে, তবুও কেউ নির্বাচন বর্জন করে না। অথচ বাংলাদেশের রাজনীতিতে নির্বাচন বর্জন এক ধরনের সংস্কৃতি তৈরি করা হচ্ছে। সুষ্ঠু নির্বাচন করার জন্য আমাদের নির্বাচন কমিশনের যথেষ্ট শক্তিশালী আইন রয়েছে এবং কঠামো রয়েছে। আমরা পৃথিবীর ধনী রাষ্ট্র না হলেও আমাদের নির্বাচন কমিশনের যথেষ্ট সক্ষমতা রয়েছে।’
শাহরিয়ার আলম আরও বলেন, ‘আজকে যারা বাংলাদেশে এসে সুস্থ নির্বাচন ও মানবাধিকারের কথা বলে, আমাদের চেয়ে তাদের জনসংখ্যা কম এবং তাদের কাছে উন্নত প্রযুক্তি ও অর্থ থাকার পরেও তাদের নির্বাচনগুলো নিয়ে প্রশ্ন উঠে। পৃথিবীর অনেক বড় বড় দেশেরও নির্বাচন ব্যবস্থা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। হয়ত কিছুদিন পর অন্য সমস্যা সামনে আসার পর আমরা সেগুলো ভুলে যাই। বাংলাদেশ, ভারত, শ্রীলংকা, নেপাল, মালদ্বীপের সংবিধানের মতো আমাদের সংবিধানে স্বাধীন নির্বাচন কমিশন আইন রয়েছে।’
জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক শ্যামল দত্তের সঞ্চালনায় সেমিনারে বক্তব্য দেন, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক আব্দুল মান্নান, একাত্তর টিভির সিইও মোজাম্মেল বাবু, ডিবিসি টেলিভিশনের প্রধান সম্পাদক এম মঞ্জুরুল ইসলাম, প্রেস ক্লাব অব ইন্ডিয়ার সভাপতি গৌতম লাহিড়ী, ভারতীয় দৈনিক জাগরণের কূটনৈতিক বিষয়ক প্রতিবেদক জে প্রকাশ রঞ্জন, টাইমস নাও টিভির কনসাল্টিং সম্পাদক সৃঞ্জয় চৌধুরী ও ভারতীয় সাংবাদিক নন্দিতা রয় প্রমুখ।
আলোচনায় অংশ নিয়ে এডিটরস গিল্ডের প্রেসিডেন্ট মোজাম্মেল বাবু বলেন, ‘বাংলাদেশে প্রধান দল দুটি। কিন্তু সমস্যা হয়ে যায় এক দল যদি নির্বাচন বর্জন করে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিকল্প নেই উল্লেখ করে তিনি বলেন, এটি সত্যি যে কিছু সংসদ সদস্য ভালো করছেন না।’
শ্যামল দত্ত বলেন, ‘তিনটি সংস্থা বড় চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি। নির্বাচন কমিশনের চ্যালেঞ্জ হচ্ছে সুষ্ঠু নির্বাচন করা, আওয়ামী লীগের চ্যালেঞ্জ ভোটারদের ভোটকেন্দ্রে নিয়ে আসা এবং বিএনপির চ্যালেঞ্জ হচ্ছে বিভিন্ন রাজনৈতিক কর্মসূচি দিয়ে টিকে থাকা।’
প্রেসক্লাব অব ইন্ডিয়ার সভাপতি গৌতম লাহিড়ী বলেন, ‘বাংলাদেশের জনগণ ঠিক করবে কীভাবে নির্বাচন হবে। এ বিষয়ে বাইরের কারও কিছু বলার সুযোগ নেই।’