মঙ্গলবার, ১৮ মার্চ ২০২৫, ০৩:৩৮ অপরাহ্ন

গাজায় যুদ্ধবিরতি ঘোষণার পরও ইসরায়েলের হামলা, নিহত ৭৩

গাজায় যুদ্ধবিরতি ঘোষণার পরও ইসরায়েলের হামলা, নিহত ৭৩

কার্যকর হওয়ার আগেই ফিলিস্তিনের গাজায় যুদ্ধবিরতি চুক্তি ভেস্তে যাওয়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে। ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস চুক্তির কিছু অংশ থেকে সরে এসেছে অভিযোগ করে চুক্তি অনুমোদন স্থগিত করেছে ইসরায়েল। তবে এ অভিযোগ নাকচ করে দিয়েছে হামাস। এদিকে যুদ্ধবিরতিতে উভয় পক্ষ সম্মত হয়েছে—এমন ঘোষণা আসার পরও গাজায় হত্যাযজ্ঞ অব্যাহত রেখেছে ইসরায়েলি বাহিনী।

গাজায় যুদ্ধবিরতি ও বন্দিবিনিময়ের বিষয়ে ইসরায়েল ও হামাস সম্মত হয়েছে বলে গতকাল বুধবার কাতারে মধ্যস্থতাকারীরা ঘোষণা দেন। আগামী রোববার থেকে এই যুদ্ধবিরতি কার্যকর হবে বলেও জানান তাঁরা।

হামাস চুক্তির কিছু অংশ থেকে সরে এসেছে অভিযোগ করে চুক্তি অনুমোদন স্থগিত করেছে ইসরায়েল। অভিযোগ নাকচ করেছে হামাস।

আজ বৃহস্পতিবার ইসরায়েলের মন্ত্রিসভায় চুক্তিটি অনুমোদন হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু হামাস শেষ মুহূর্তে চুক্তির কিছু অংশ থেকে সরে এসেছে এমন অভিযোগ তুলে গতকাল মন্ত্রিসভার বৈঠক স্থগিত করার কথা জানায় ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর দপ্তর।

প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর বলেছে, হামাস চুক্তির সব শর্ত মেনে নিয়েছে—মধ্যস্থতাকারীরা বিষয়টি না জানানো পর্যন্ত মন্ত্রিসভার বৈঠক আহ্বান করা হবে না।

তবে ইসরায়েলের অভিযোগের কোনো ‘ভিত্তি নেই’ বলে মন্তব্য করেছেন হামাসের রাজনৈতিক শাখার সদস্য সামি আবু জুহরি। এর আগে এক বিবৃতিতে হামাসের রাজনৈতিক শাখার আরেক সদস্য ইজ্জাত আল-রিশেক বলেন, ‘মধ্যস্থতাকারীদের ঘোষণা করা যুদ্ধবিরতি চুক্তির বিষয়ে অঙ্গীকারবদ্ধ হামাস।’

আল-জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়, মূলত অভ্যন্তরীণ চাপের কারণে চুক্তি অনুমোদনের বিষয়টি ঝুলিয়ে দিয়েছেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী। তাঁর জোট সরকারের উগ্র-ডানপন্থী অর্থমন্ত্রী বেজালেল স্মত্রিচ পদত্যাগের হুমকি দিয়ে বলেছেন, যুদ্ধবিরতি চুক্তি অনুমোদন দেওয়া হলে গৃহযুদ্ধ পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে।

মিসর ও গাজা সীমান্তবর্তী ১৪ কিলোমিটার দীর্ঘ ফিলাডেলফি করিডর থেকে সেনা সরিয়ে নেওয়ার বিষয়ে ইসরায়েল সম্মত হওয়ায় বিস্মিত হয়েছেন কাতার ইউনিভার্সিটির গালফ স্টাডিজ সেন্টারের গবেষক লুসিয়ানো জাকারা। এখন ইসরায়েলি নেতারা সেখান থেকে সেনা প্রত্যাহার না করার ইঙ্গিত দিচ্ছেন, যার ফলে চুক্তিটি ভেস্তে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে।

জাকারা বলেন, নেতানিয়াহু যদি এখন সেনা উপস্থিতি ধরে রাখার ওপর জোর দেন, তাহলে চুক্তি থেকে সরে যাওয়ার দায় হামাস নয়, ইসরায়েলের ওপর বর্তায়। কারণ, শেষ মুহূর্তে ইসরায়েল এই পরিবর্তন এনেছে।

গাজায় হত্যাযজ্ঞ অব্যাহত

যুদ্ধবিরতিতে উভয় পক্ষ সম্মত হয়েছে এমন ঘোষণা আসার পরও গাজায় নির্বিচার হামলা অব্যাহত রেখেছে ইসরায়েল। ওই ঘোষণা আসার পর ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় ৭৩ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন ২৩০ জন। গাজার জরুরি পরিষেবা বিভাগ গতকাল এ কথা জানিয়েছে। নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে ২০ শিশু ও ২৫ নারী রয়েছেন।

এদিকে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় আজ জানিয়েছে, আগের ২৪ ঘণ্টায় ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় গাজায় কমপক্ষে ৮১ ফিলিস্তিনি নিহত হন। এ নিয়ে ১৫ মাস ধরে চলা এই যুদ্ধে গাজায় ৪৬ হাজার ৭৮৮ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন ১ লাখ ১০ হাজার ৪৫৩ জন।

তবে গাজায় নিহতের সংখ্যা আরও বেশি বলে মনে করা হচ্ছে। সাধারণত হাসপাতালে আসা মরদেহের ভিত্তিতে নিহতের পরিসংখ্যান দিয়ে থাকে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। ইসরায়েলি হামলায় বিধ্বস্ত বাসাবাড়ি ও স্থাপনার নিচে এখনো অনেক মরদেহ পড়ে আছে।

সম্প্রতি চিকিৎসাবিষয়ক সাময়িকী ল্যানসেট-এ প্রকাশিত এক গবেষণায় বলা হয়, ইসরায়েলি হামলার প্রথম ৯ মাসে গাজায় নিহতের প্রকৃত সংখ্যা উপত্যকাটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের পরিসংখ্যানের চেয়ে প্রায় ৪১ শতাংশ বেশি।

২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলের দক্ষিণাঞ্চলে আকস্মিক হামলা চালায় হামাস। ইসরায়েলের দাবি, হামলায় নিহত হন ১ হাজার ১০০ জনের বেশি। প্রায় ২৪০ জনকে জিম্মি করে গাজায় নিয়ে যাওয়া হয়। সাময়িক অস্ত্রবিরতি ও বন্দিবিনিময়ের অধীনে তাঁদের প্রায় ১০০ জন এরই মধ্যে মুক্তি পেয়েছেন। কেউ কেউ ইসরায়েলি হামলায় প্রাণ হারিয়েছেন। ওই দিন থেকেই গাজায় নির্বিচার হামলা শুরু করে ইসরায়েল।

শেয়ার করুন .....




© 2018 allnewsagency.com      তত্ত্বাবধানে - মোহা: মনিকুল মশিহুর সজীব
Design & Developed BY ThemesBazar.Com