মঙ্গলবার, ১৮ মার্চ ২০২৫, ০২:২১ পূর্বাহ্ন
অর্থনীতি ডেস্ক : ভোজ্যতেলের আমদানি বাড়লেও বাজারে বোতলজাত সয়াবিন তেলের সংকট কাটেনি। সয়াবিন তেলের সংকট কেটে যাবে বলে যে ঘোষণা বাণিজ্য উপদেষ্টা দিয়েছিলেন, তার বাস্তবায়ন দেখা যাচ্ছে না বাজারে।
অন্যদিকে ইফতারে অন্যতম পদ ছোলার দাম কেজিতে ২০ টাকা কমলেও সবজিসহ অন্য ভোগ্যপণ্যের দাম স্থিতিশীল রয়েছে। সপ্তাহের ব্যবধানে এলাচ ও আলুর দাম বেড়েছে। বগুড়া আলু প্রতি কেজি ৩০ টাকায় এবং অন্যান্য জাতের আলু আগের দাম ২০ টাকায়ই বিক্রি হচ্ছে।
মসলার মধ্যে এলাচের দাম অস্বাভাবিক বেড়েছে। সবজির দাম নতুন করে না বাড়লেও শসার দাম খানিকটা ঊর্ধ্বমুখী। এর দাম আরো বাড়তে পারে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। এদিকে চালের দাম নতুন করে না বাড়লেও আগের বাড়তি দামেই বিক্রি হচ্ছে।
গত বছরের তুলনায় এবার বেশি সয়াবিন তেল আমদানি হলেও রমজান শুরু হওয়ার আগে বাজারে বোতলজাত সয়াবিন তেলের কৃত্রিম সংকট তৈরির অভিযোগ উঠেছে। দোকানে দোকানে ঘুরে সহজে মিলছে না সয়াবিন তেল। মিললেও গুনতে হচ্ছে অতিরিক্ত টাকা।
রাজধানীর কারওয়ান বাজারে গতকাল বৃহস্পতিবার অধিকাংশ দোকান ঘুরে জানা গেছে, বোতলজাত সয়াবিন তেলের সংকট এখনো কাটেনি। রমজান মাস যতই এগিয়ে আসছে, বাজারে সয়াবিনের চাহিদা ততই বাড়ছে। কিন্তু সরবরাহ নেই।
হাজী মিজান ট্রেডার্সের মালিক মিজান বলেন, যেখানে সপ্তাহে ৫০০ থেকে ৬০০ কার্টন সয়াবিন তেলের দরকার, সেখানে তিনদিন পরপর পাওয়া যাচ্ছে মাত্র পাঁচ থেকে ১০ কার্টন তেল। বাজারে বড় ধরনের সিন্ডিকেট সক্রিয়। এ বিষয়ে সরকারের শক্ত ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন।
মেসার্স আল-আমিন টেডার্সের আজগর হোসেন বলেন, সয়াবিন তেল তো পাওয়াই যাচ্ছে না, বিক্রি করব কোথা থেকে? ১০০ কার্টন চাইলে পাঁচ কার্টনও পাওয়া যাচ্ছে না।
বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের হিসাবে, রোজায় ভোজ্যতেলের চাহিদা তিন লাখ টন। সে তুলনায় সরবরাহ নেই বললেই চলে। দেশে বোতলজাত সয়াবিন তেলের এ সংকট দীর্ঘদিন ধরেই চলছে। বাজারে সংকট থাকলেও বিপুল পরিমাণ সয়াবিন তেল আমদানির তথ্য রয়েছে।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের তথ্যে দেখা যায়, জানুয়ারি মাসে এক লাখ ১৭ হাজার টন সয়াবিন তেল আমদানি হয়েছে, যা গত ছয় বছরে মাসিক ভিত্তিতে সর্বোচ্চ। তবে ফেব্রুয়ারির প্রথম ২০ দিনে মাত্র এক জাহাজ সয়াবিন তেল আমদানি হয়েছে।
আমদানি বৃদ্ধির ধারাবাহিকতা না থাকায় সয়াবিন তেলের সংকট তীব্র হয়। এখন রোজার আগ মুহূর্তে সয়াবিন তেল নিয়ে একের পর এক ট্যাংকার বন্দরে পৌঁছতে শুরু করায় সংকট বেশি দিন থাকবে না বলে দাবি করছেন আমদানিকারকরা।
টি কে, এমজিআই ও সিটি গ্রুপের সূত্রে জানা গেছে, সব মিলিয়ে দুই সপ্তাহের মধ্যে টি কে গ্রুপের ৪৩ হাজার টন, এমজিআইয়ের ৫০ হাজার টন এবং সিটি গ্রুপের ২৬ হাজার টন সয়াবিন তেল আমদানি হচ্ছে। এর বাইরে অন্যান্য কোম্পানির ১১ হাজার টন সয়াবিন তেল আমদানির হিসাব পাওয়া গেছে।
চট্টগ্রাম বন্দর ও আমদানিকারকদের সূত্রে জানা গেছে, রোজার এক সপ্তাহের মধ্যেই এক লাখ ২৯ হাজার টন বা প্রায় ১৪ কোটি লিটার সয়াবিন তেল আমদানি হচ্ছে।
৩০ থেকে ৪০ শতাংশ ভোগ্যপণ্যের সরবরাহকারী একটি প্রতিষ্ঠানের কর্ণধার নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, এই মুহূর্তে বাজারে সয়াবিন তেলের কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করা হচ্ছে।
বাজারে দেশি পেঁয়াজের দাম গত সপ্তাহের তুলনায় কেজিপ্রতি পাঁচ টাকা বেড়ে বর্তমানে মানভেদে ৫০ থেকে ৫৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। রসুন ২৩০ টাকা এবং আদা ১০ টাকা বেড়ে ১২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। মসলার মধ্যে এলাচের দাম অস্বাভাবিক বেড়েছে। কেজিতে এক থেকে দেড় হাজার টাকা বেড়ে বর্তমানে পাঁচ থেকে হাজার সাড়ে পাঁচ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া অন্যান্য মসলার দাম স্থিতিশীল রয়েছে। ইফতারের অন্যতম পদ ছোলার দাম কেজিতে ২০ টাকা কমে ১১০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
সবজির দাম নতুন করে না বাড়লেও শসা ও আলুর দাম খানিকটা ঊর্ধ্বমুখী। প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৪৫ থেকে ৫০ টাকায়। দেশি আলু ২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হলেও বগুড়ার আলু ৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। কাঁচামরিচ মানভেদে ৩০ থেকে ৪০ টাকা, টমেটো ৩০ টাকা, শিম ৩০ টাকা, ফুলকপি ২০ থেকে ৩০ টাকা, বেগুন ৪০ থেকে ৫০ টাকা, গাজর ২০ থেকে ২৫ টাকা এবং লাউ প্রতি পিস ৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
মাছ-মাংসের দাম আগের মতোই স্থিতিশীল রয়েছে। তেলাপিয়া ২০০ টাকা, পাঙাশ ২২০ টাকা, রুই আকারভেদে ২৮০ থেকে ৫০০ টাকা, কাতলা আকারভেদে ৩০০ থেকে ৭০০ টাকা, পাবদা ৪০০ টাকা, বোয়াল আকারভেদে ৫৫০ থেকে এক হাজার টাকা, ইলিশ আকারভেদে এক হাজার ৫০০ থেকে দুই হাজার টাকা, বেলে ৫৫০ টাকা, রূপচাঁদা এক হাজার, বড় শোল মাছ ৭৫০ টাকা, মাগুর ৭০০ টাকা, বাটা ৫৫০ টাকা ও দেশি ট্যাংরা ৭০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
দেশি মুরগির দাম স্থিতিশীল থাকলেও অন্যান্য জাতের দাম কিছুটা বেড়েছে। কারওয়ান বাজারসহ বিভিন্ন বাজারে পাকিস্তানি মুরগি ২৮০ থেকে ৩০০ টাকা, লেয়ার ২৫০ টাকা থেকে ২৮০ টাকা এবং ব্রয়লার মুরগি ১৯০ থেকে ২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
ডেস্ক/এমএস