বুধবার, ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১০:৪০ অপরাহ্ন

সংবাদ শিরোনাম :
লালমনিরহাটে ধানক্ষেতে মিলল নিখোঁজ বৃদ্ধের মরদেহ। আগামী শুক্রবার থেকে সপ্তাহে সাতদিনই চলবে মেট্রোরেল মেয়াদোত্তীর্ণ বিদেশি দায় ৫-৬ মাসের মধ্যে পরিশোধ করা হবে: গভর্নর চাঁপাইনবাবগঞ্জে শহীদুল হক ও বেনজীরের বিরুদ্ধে মামলার তদন্ত করবে পিবিআই অন্তর্বর্তী সরকারকে কোনোভাবেই ব্যর্থ হতে দেওয়া যাবে না : তারেক রহমান রাজশাহী মহানগর পুলিশের ৯ থানায় নতুন ওসি ভারত থেকে কম শুল্কের পেঁয়াজ আমদানি শুরু, পাইকারিতে প্রতি কেজির সর্বোচ্চ দাম ৮৪ টাকা ৯ কারখানায় দিনভর শ্রমিক অসন্তোষ, আবারও অস্থিতিশীল গাজীপুর ভারতের মুসলিমদের নিয়ে ইরানের সর্বোচ্চ নেতার মন্তব্য, নিন্দা জানাল নয়াদিল্লি নয়াপল্টনে চলছে বিএনপির সমাবেশ
বাংলাদেশের পর্যটক না যাওয়ায় ধুঁকছে ভারতের যেসব অঞ্চল

বাংলাদেশের পর্যটক না যাওয়ায় ধুঁকছে ভারতের যেসব অঞ্চল

মাস দুয়েক আগেও কলকাতার নিউমার্কেট, মার্কুইজ স্ট্রিট গিজ গিজ করত বাংলাদেশের মানুষে। তবে জুলাই মাস থেকে বাংলাদেশে কোটা সংস্কার আন্দোলন, ব্যাপক সহিংসতা, কারফিউ, শেষে শেখ হাসিনার দেশ ছেড়ে পলায়ন- সব মিলিয়ে কলকাতায় এখন বাংলাদেশী পর্যটক প্রায় নেই বললেই চলে।

এর একটা বড় কারণ ভারতীয় হাইকমিশন বাংলাদেশে ভিসা দেয়ার ব্যবস্থা সম্পূর্ণ চালু করেনি। তাই আগে থেকে যারা ভিসা নিয়েছিলেন এবং জরুরি চিকিৎসা করাতে হলেই ভারতে প্রবেশের অনুমতি পাচ্ছেন বাংলাদেশীরা।

কলকাতার নিউমার্কেট, মার্কুইস স্ট্রিট বা মুকুন্দপুর অঞ্চলের বেসরকারি হাসপাতালগুলোতেই মূলত বাংলাদেশী পর্যটকরা অবস্থান করেন, কেনাকাটা করেন। ওইসব এলাকায় বাংলাদেশী পর্যটকদের ভিড় লেগে থাকে বছরভর।

ঐতিহ্যবাহী নিউমার্কেটের শপ ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক অশোক গুপ্তা বলেন, ‘বাংলাদেশ থেকে প্রায় কেউই আসছেন না মাসখানেকের বেশি সময় হয়ে গেল। নিউমার্কেটের জামাকাপড়ের দোকান বলুন বা অন্যান্য সামগ্রী- এসবের একটা বড় ক্রেতা বাংলাদেশের মানুষ। ভারতীয় ভিসা ব্যবস্থা এখনো পুরোপুরি চালু হয়নি, তাই তারা প্রায় কেউই আসতে পারছেন না। আমাদের বিক্রি প্রায় ৬০ শতাংশ কমে গেছে গত এক মাসে।’

তবে নিউমার্কেটের ব্যবসা কমে যাওয়ার আরো একটা কারণ আরজি কর মেডিক্যাল কলেজে তরুণী চিকিৎসকের ধর্ষণ ও হত্যাকাণ্ডে।

গুপ্তার কথায়, ‘ওই ঘটনা মানুষকে এতটাই নাড়া দিয়েছে যে বহু মানুষেরই কেনাকাটা করার, উৎসবে মাতার মতো মন নেই। এছাড়া রোজই মিছিল প্রতিবাদ হচ্ছে। তাই মানুষ এখন এদিকে আসা কমিয়ে দিয়েছে।’

একই অবস্থা বাংলাদেশীরা মূলত যে এলাকার হোটেলগুলোতে থাকেন, সেই মার্কুইস স্ট্রিটেও।

হোটেল-খাবারের দোকান বা অন্যান্য পরিষেবা- এই রাস্তার সব কিছুই বাংলাদেশী পর্যটক-কেন্দ্রিক।

করোনার সময়ে যেমন বাংলাদেশী পর্যটক ভারতে যাওয়া বন্ধ হয়ে গিয়েছিল, গত এক মাসে বাংলাদেশে ঘটনার জেরে আবারো প্রায় সেই অবস্থাতেই পৌঁছেছে।

আবার বহু মানুষ বাংলাদেশ থেকে চিকিৎসা করাতে যান কলকাতায়।

ভারতের একটি বেসরকারি হাসপাতাল গোষ্ঠী জানাচ্ছে, এক মাস আগের তুলনায় এখন বাংলাদেশী রোগীর সংখ্যা এক-তৃতীয়াংশ কমে গেছে।

হোটেলের ঘর প্রায় ফাঁকা
মার্কুইস স্ট্রিট এলাকাটি বহু বাংলাদেশী মানুষের কাছে অতি পরিচিত এলাকা। কলকাতার কেন্দ্রস্থলের এই এলাকায় বহু হোটেল রেস্তোরাঁ আছে, যারা মূলত বাংলাদেশী পর্যটকদের ওপরে নির্ভর করেই ব্যবসা করে থাকে।

এছাড়াও ওই অঞ্চলে মানিএক্সচেঞ্জ, বাসের কাউন্টারসহ বাংলাদেশী পর্যটকদের প্রায় সব ধরনের পরিসেবাই পাওয়া যায়।

ওই এলাকায় গেলে মনেই হবে না যে এটা ঢাকার বাইরে অন্য কোনো শহরের রাস্তা।

তবে জুলাই মাস থেকে বাংলাদেশে কোটা সংস্কার আন্দোলন শুরু হওয়ার পর থেকে ভারতে বাংলাদেশীদের যাওয়া কমে যায়। আর অগাস্ট থেকে তা একরকম বন্ধই হয়ে গেছে।

মার্কুইস স্ট্রিটের হোটেল মালিকদের সংগঠনের নেতা মনোতোষ সরকার বলেন, ‘এখন শুধু মাত্র মেডিক্যাল ভিসা নিয়ে মানুষ আসতে পারছেন, অথবা আগে থেকে যাদের ভিসা নেয়া ছিল, তারা আসছেন। কয়েক মাস আগেও আমাদের হোটেলগুলোর ৬০ থেকে ৮০ শতাংশ অকুপেন্সি রেট ছিল। এখন সেটা নেমে এসেছে মাত্র ৩০ শতাংশে।’

রুম অকুপেন্সি রেট হলো হোটেল ব্যবসার একটি শব্দ, যা হোটেলের মোট ঘরের সংখ্যার কত শতাংশে মানুষ থাকছেন তার হিসাব।

অর্থাৎ হোটেলগুলোতে ১০০টি ঘর থাকলে এখন মাত্র ৩০টি ঘরে পর্যটক থাকছেন।

মনোতোষ সরকার বলেন, ‘মার্কুইস স্ট্রিটে তো শুধু হোটেল নয়, বাংলাদেশী পর্যটকদের আরো বহু পরিসেবা প্রদানকারী সংস্থা আছে। তাদেরও মূল ক্রেতা ওদেশের পর্যটকরাই। তারা এখন এতটাই কম সংখ্যায় আসছেন, যে সব ব্যবসায়ীরাই মার খাচ্ছে। বাস আসছে বাংলাদেশী পর্যটক নিয়ে, কিন্তু সেখানেও দেখা যাচ্ছে ওই ৩০ শতাংশ মতেই আসন ভর্তি হচ্ছে, বাকিটা ফাঁকা থাকছে।’

কত দিন এই অবস্থা চলবে, তা অনিশ্চিত। তাই অন্য কোনো অঞ্চলের ক্রেতাদের আকৃষ্ট করা যায় কিনা, সে ব্যাপারে ভাবনা চিন্তা শুরু করছেন মার্কুইস স্ট্রিটের হোটেল ব্যবসায়ীরা।

নিউমার্কেট
এসএস হগ মার্কেট, যা নিউমার্কেট বলে পরিচিত, অথবা তার আশপাশের বিপণী বিতানগুলোতে সারাবছরই বাংলাদেশী পর্যটকদের ভিড় লেগে থাকে। বেড়াতে অথবা চিকিৎসা করানো জন্য- বেশিভাগ বাংলাদেশী পর্যটকই কলকাতায় গেলে নিউমার্কেটে কেনাকাটা করতে যান।

বিশেষত পোশাকের দোকানগুলোতে বাংলাদেশী ক্রেতাদেরই ভিড় দেখা যেত।

নিউমার্কেটের দোকান মালিকদের সংগঠনের প্রধান অশোক গুপ্তা বলেন, ‘কিন্তু এক মাস হয়ে গেল, তারা এখন আর ভারতে আসছেন না প্রায় কেউই। আমাদের দোকানগুলোর ৬০ শতাংশ বিক্রি কমে গেছে এই এক মাসে।’

পোষাক, সাজগোজের জিনিষ অথবা জুতাসহ সব ব্যবসায়ীই ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন বলে জানান তিনি।

অশোক গুপ্তা বলেন, ‘মাস খানেকের মধ্যেই দুর্গাপুজা। পুজা আর ঈদের আগে আমাদের ব্যবসার বড় সিজন। পুজার সময়ে শুধু যে হিন্দুরা কেনাকাটা করেন না তা নয়। এই সময়ে অনেক নতুন ডিজাইনের পোষাক বাজারে আসে, তাই মুসলমান এবং অবশ্যই বাংলাদেশীরা এই সময়ে কেনাকাটা করতে আসতেন। আবার পাইকারি বাজার থেকে পোষাক কিনে বাংলাদেশে নিয়ে যাওয়ার জন্য সেদেশ থেকে ব্যবসায়ীরাও আসতেন।’

তিনি আরো বলেন, ‘তবে এ বছর কেউই প্রায় আসছেন না। বাংলাদেশের পরিস্থিতি তো একটা কারণ। আবার কলকাতায় এখন বহু মানুষ আরজি করের ঘটনা নিয়ে এতটাই মন খারাপ করে আছেন যে তারাও কেনাকাটা করতে উৎসাহ পাচ্ছেন না। কবে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে তা বোঝা যাচ্ছে না। তাই আগামী পাঁচ-ছয় দিন সময়টা খুব গুরুত্বপূর্ণ।’

তার কথায়, ‘এই সময়ের মধ্যে বাজারের পরিস্থিতি যদি কিছুটা উন্নতি হলে তা হলে ভালো। না হলে এবারের কেনাকাটার মৌসুমটা পুরোই লস আমাদের।’

নিউমার্কেটের কাছাকাছি আরো যে কয়টি বড় শপিং মল বা বড় বড় দোকান আছে, সেখানেও একই পরিস্থিতি বলে জানা যাচ্ছে।

হাসপাতালেও রোগী কমেছে
বাংলাদেশ থেকে যারা ভারতে যান, তাদের একটা বড় অংশ স্বাস্থ্য পরিসেবার জন্য যান। কলকাতা হোক বা ভেলোর, চেন্নাই,বেঙ্গালুরু অথবা দিল্লি-মুম্বাই- বহু বেসরকারি হাসপাতালে বাংলাদেশের মানুষের ভিড় লেগে থাকে।

এসব হাসপাতালগুলোতে বাংলা কথা বলা কর্মকর্তারা যেমন থাকেন, তেমনই বাংলাদেশীদের জন্য থাকে পৃথক পরিসেবা-ডেস্কও।

কলকাতার যেসব বেসরকারি হাসপাতালে বাংলাদেশী রোগীরা বেশি সংখ্যায় যান, ওই হাসপাতালগুলো বলছে, গত এক মাসে বাংলাদেশী রোগীর সংখ্যা কম।

যদিও ভারতের হাইকমিশনগুলো মেডিক্যাল ভিসা দিচ্ছে, তা সত্ত্বেও আগের তুলনায় কম সংখ্যক রোগীর দেখা পাওয়া যাচ্ছে কলকাতার হাসপাতালগুলোতে।

মনিপাল হসপিটালস গোষ্ঠী কলকাতার বেশ কয়েকটি হাসপাতাল অধিগ্রহণ করেছে কয়েক মাস আগে। তাদের অধীন হাসপাতালগুলোতে গড়ে দুই হাজার ১০০ জন বাংলাদেশী রোগী যান প্রতিমাসে। সেই সংখ্যাটা প্রায় এক তৃতীয়াংশে নেমে এসেছে।

তবে মনিপাল হসপিটালস গোষ্ঠীর পূর্বাঞ্চলের জন্য আঞ্চলিক চিফ অপারেটিং অফিসার অয়নাভ দেবগুপ্ত বলেন, ‘এই মুহূর্তে বাংলাদেশ থেকে মনিপাল হসপিটালসে আসা রোগীর সংখ্যা সামান্য হলেও বেড়েছে। কিন্তু দু’মাস আগে যত রোগী আসতেন এই সংখ্যাটা তার থেকে অনেক কম। ঢাকায় ভারতীয় দূতাবাস এখনো ভিসা ব্যবস্থাপনা পুরোপুরি স্বাভাবিক করেনি, তাই যখন যেমন ভিসা পাচ্ছেন রোগীরা, তখন আসছেন এখানে।’

কলকাতার ইস্টার্ন বাইপাস-সংলগ্ন এলাকার হাসপাতালগুলোতেই বাংলাদেশী রোগীদের ভিড় সব থেকে বেশি দেখা যায়।

সেখানকার হাসপাতালগুলোকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে এক বিরাট পরিসেবা শিল্প। খাওয়ার বা থাকার হোটেল, ওষুধের দোকান- সব মিলিয়ে প্রায় লাখ খানেক মানুষের রোজগার চলে ওই হাসপাতালগুলোকে কেন্দ্র করে।

কলকাতার রোগীদের ভিড় সেখানে স্বাভাবিক থাকলেও এদের একটা বড় অংশ নির্ভর করে বাংলাদেশী রোগীদের ওপরে।

তাই বাংলাদেশ থেকে পর্যটক বা রোগী যাওয়া যতক্ষণ না স্বাভাবিক হচ্ছে, তত দিন এই বিপুল সংখ্যক মানুষের অনিশ্চয়তা কাটছে না।
সূত্র : বিবিসি

শেয়ার করুন .....




© 2018 allnewsagency.com      তত্ত্বাবধানে - মোহা: মনিকুল মশিহুর সজীব
Design & Developed BY ThemesBazar.Com