রবিবার, ১৯ মে ২০২৪, ০৬:১৬ পূর্বাহ্ন

ভাবনায় নির্বাচনকালীন ‘বিকল্প সরকার’

ভাবনায় নির্বাচনকালীন ‘বিকল্প সরকার’

সংবিধান অনুযায়ী একটি সরকার থেকে নির্বাচনের মাধ্যমে আরেকটি সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর হবে। আর নির্বাচনের সময় আগের নির্বাচিত সরকারই তার দায়িত্ব পালন অব্যাহত রাখবে। নির্বাচন পরিচালনা করবে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এক্ষেত্রে সরকারের কর্তব্য হবে নির্বাচন অনুষ্ঠানে কমিশনকে সহায়তা করা।

নির্বাচনের সময় সরকারের আকার ছোট করা বা কেবল নির্বাচিত প্রতিনিধিকে নিয়ে সরকার গঠনের কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। অথচ এই বিষয়টিকে নিয়েই দেশের রাজনীতি এখন টালমাটাল। ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ ও তাদের চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপি নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে নিজ নিজ অবস্থান থেকে গো ধরে বসে আছে। যে কারণে সর্বজনগ্রাহ্য ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন নিয়ে রীতিমতো চ্যালেঞ্জে পড়েছে নির্বাচন কমিশন।

নির্বাচন ও রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, বিএনপি ও সমমনাদের চাওয়া পূরণ সম্ভব সংবিধানের মধ্যে থেকেই। এক্ষেত্রে সরকারকে আন্তরিক হতে হবে। একটু কৌশলী হয়ে ‘বিকল্প সরকার’ গঠনের পথে যেতে পারেন তারা। অবশ্য সরকার এবং ক্ষমতাসীন দলের কেউ কেউ এই বিষয়টি নিয়ে যে একেবারেই ভাবছেন না তা নয়। মধ্য নভেম্বরের দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগেই এ বিষয়টি সুরাহা হতে পারে বলে আশা করছেন তারা।

বিকল্প কী আছে? আওয়ামী লীগের আন্দোলন ও দাবির মুখে নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা প্রবর্তন হয়েছিল সংবিধানে ত্রয়োদশ সংশোধনীর মাধ্যমে। ২০১১ সালে এ ব্যবস্থা বাতিল হয়েছে উচ্চ আদালতের একটি রায়ের ভিত্তিতে সংবিধানে পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে। বর্তমানে সংবিধানে নির্বাচনকালীন সরকার ব্যবস্থার কোনো সুনির্দিষ্ট উল্লেখ নেই। কিন্তু আইনের মধ্যে থেকে নির্বাচনকালীন সরকার গঠনের দুটি বিকল্প ব্যবস্থা রয়েছে বলে মনে করেন সংবিধান বিশেষজ্ঞ ড. শাহদীন মালিক। একটি সর্বদলীয় সরকার এবং আরেকটি হচ্ছে সরকার প্রধানের পদত্যাগের মাধ্যমে।

তার মতে, আওয়ামী লীগের যারা মন্ত্রী আছেন, এটাকে কমিয়ে দশ-বারো জনের মন্ত্রিসভা করা যেতে পারে। কিন্তু ওই মন্ত্রিসভার সদস্য হতে হবে সংসদ সদস্যদের। তর্কের খাতিরে যদি বিশ জনের ছোটো মন্ত্রিসভা হয় এবং দুজন টেকনোক্রাট নেয়া যায় এবং তাদের গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেয়া যায়- সেটি একটি বিকল্প হতে পারে। আরেকটা অপশন হলো প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করলেন কিন্তু সংবিধান অনুযায়ী আওয়ামী লীগেরই অন্য কোনো সংসদ সদস্য তখন প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করবেন। বর্তমান সংবিধানে সপ্তম ভাগে ১২৩ অনুচ্ছেদে নির্বাচন প্রসঙ্গে দুটি বিষয় উল্লেখ রয়েছে। একটি হলো সংসদ ভেঙে দিলে। সংসদীয় ব্যবস্থায় প্রধানমন্ত্রীর উপদেশে রাষ্ট্রপতি যেকোনো সময় সংসদ ভেঙে দিতে পারেন।

তিনি বলেন, সংসদ ভেঙে দিলে ভেঙে যাওয়া দিন থেকে যারা সংসদ সদস্য ছিলেন তারা আর আসনে থাকবেন না এবং নব্বই দিনের মধ্যে নির্বাচন হবে। নির্বাচনের সময় সংসদ ভেঙে দিলে কিছুটা হয়তো সমতার ব্যাপারটা চলে আসবে। সরকারি দলের বা যেই নির্বাচন করুক কেউই সংসদ সদস্য না। তখন কিছুটা হয়তো ফেয়ারপ্লে হবে। তবে বর্তমান সংবিধান সমুন্নত রেখে আইনের মধ্যে থেকে সংসদ ভেঙে দেয়া বা নির্বাচনকালীন মন্ত্রিসভা গঠন করে সেখানে টেকনোকক্র্যাট হিসেবে বিরোধী দলকে নেয়া বা শেখ হাসিনার পদত্যাগের মতো বিষয়ে রাজনৈতিক ঐক্যমত্য হবে কি না সে ব্যাপারে সন্দেহ পোষণ করেন এই সংবিধান বিশেষজ্ঞ।

ভাবছে আওয়ামী লীগ: এক দশক হয়ে গেল নির্বাচনকালীন সরকার পদ্ধতি তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল হয়েছে। সংশোধিত সংবিধান অনুযায়ী, দলীয় সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত দুটো নির্বাচনেই আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করলেও নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে দেশ-বিদেশে বিতর্ক রয়ে গেছে। এ জন্য সরকারকে আন্তর্জাতিক মহলেও প্রতিনিয়ত নানা প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হচ্ছে। আগামী নির্বাচনে সেই প্রশ্ন ও বিতর্ক কাটিয়ে উঠতে চায় ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ।

একই সাথে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানের দিকে মনোযোগ রয়েছে সরকারের। এ জন্য তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিষয়ে আওয়ামী লীগ অনড় অবস্থানে থাকলেও ভেতরে ভেতরে বিকল্প ফর্মুলা নিয়ে নতুন করে ভাবছে। দলটির নীতিনির্ধারণী মহল গ্রহণযোগ্য নির্বাচনকালীন সরকার পদ্ধতি কেমন হতে পারে তা নিয়েও ইতোমধ্যে ভাবতে শুরু করেছে। অতীতের বিতর্ক এড়িয়ে কীভাবে বিএনপিসহ নিবন্ধিত সব রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণে একটি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন নিশ্চিত করা যায় সে চিন্তাও করছে ক্ষমতাসীনরা। দলের ভেতর এমন অনানুষ্ঠানিক আলোচনার গুঞ্জন রয়েছে বলে জানা গেছে।

রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মতে, ইতিবাচক চিন্তা থেকেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সম্প্রতি একাদশ জাতীয় সংসদের প্রতিনিধিত্বকারী দলগুলোকে নিয়ে আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য নির্বাচনকালীন সরকার গঠনের কথা বলেছেন। সম্প্রতি তিনি বলেন, ‘আমরা আমাদের উদারতা দেখাতে পারি যে, সংসদে যেসব দল রয়েছে তাদের সংসদ সদস্যদের মধ্য থেকে কেউ নির্বাচনকালীন সরকারে যোগদানের ইচ্ছা প্রকাশ করলে, আমরা তাদের স্বাগত জানাতে প্রস্তুত রয়েছি। আওয়ামী লীগ এর আগেও এমন উদারতা দেখিয়েছে। ২০১৪ সালের জাতীয় নির্বাচনের আগে খালেদা জিয়াকে ওই নির্বাচনকালীন সরকারে তার দলের প্রতিনিধি দিতে বলা হয়েছিল। কিন্তু তারা তা করেনি।’

একটি নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে, সংবিধানে প্রধানমন্ত্রীকে একক ক্ষমতা দেয়া আছে। অতীতের বিতর্ক ঘোচাতে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের স্বার্থে প্রধানমন্ত্রীর বড় ধরনের ছাড় দেয়ার বিষয়ে ইতিবাচক মনোভাব রয়েছে। সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচনকালীন সরকারের প্রধান হিসেবে শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী থাকার ব্যাপারে বিএনপির ঘোর আপত্তি রয়েছে। যার ফলে এটি নিয়ে কোনো সমাধানে পৌঁছতে না পারলে প্রধানমন্ত্রী একক ক্ষমতা বলে নির্বাচনকালীন একটি উপদেষ্টা পরিষদ গঠন করে দিতে পারেন। ওই উপদেষ্টা পরিষদ আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন চলাকালীন দায়িত্ব পালন করবেন। ওই উপদেষ্টা পরিষদে আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টি ও অন্যান্য রাজনৈতিক দল এবং সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা থাকবেন। এছাড়া ২০১৩ সালের মতো নির্বাচনকালীন সরকার গঠনের সময় বিএনপিকে আহ্বান করা হতে পারে। দুটো বিষয় নিয়েই দলের মধ্যে আলোচনা আছে। তবে এটি নির্ভর করছে বিএনপির আন্দোলনের গতি এবং আন্তর্জাতিক মহলের চাপও সদিচ্ছার ওপর।

আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের একজন সদস্য ও সংবিধান বিশেষজ্ঞ নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, সুপ্রিম কোর্টের রায়ে সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে তত্ত¡াবধায়ক সরকার পদ্ধতি বাতিল হয়ে গেছে। ওই ব্যবস্থা আর ফিরে আসবে না।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, রাজনৈতিক সমঝোতার মাধ্যমে অনেক কিছুই করা সম্ভব। তবে সেটাও সংবিধান অনুযায়ী, সংবিধানের মধ্যে থেকে হতে হবে। সংবিধানের বাইরে গিয়ে কোনো কিছুই করা সম্ভব নয়।

একাধিক বিকল্পের কথা ভাবছে বিএনপি: নির্বাচনকালীন সরকার কেমন হবে, তার একটি রূপরেখা দাঁড় করাচ্ছে প্রধান বিরোধীদল বিএনপি। একাধিক বিকল্পের কথা ভাবা হচ্ছে। তবে একজন ‘সর্বজন গ্রহণযোগ্য’ ব্যক্তিকে নির্বাচনকালীন সরকারের প্রধান করার বিষয়টিকেই সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। বাতিল হয়ে যাওয়া তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কাঠামোকে ভিত্তি হিসেবে রাখতে চায় দলটি। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সম্প্রতি সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, শিগগিরই তাদের দল নির্বাচনকালীন সরকারের একটি রূপরেখা উপস্থাপন করবে।

সূত্র জানায়, নির্বাচনকালীন সরকারের রূপরেখার ক্ষেত্রে পঞ্চদশ সংশোধনীর আগের সংবিধানের ৫৮(খ) ধারাকে ভিত্তি হিসেবে ধরছে বিএনপি। সে ধারায় বাতিল হয়ে যাওয়া তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিধান ও কাঠামো ছিল। ২০১১ সালে আদালতের রায়ে এ ব্যবস্থা বাতিল করা হয়। কিন্তু সংক্ষিপ্ত রায়ে আরও দুটি নির্বাচন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে হতে পারে বলে বলা হয়েছিল। সেটি বিবেচনায় রেখে বিচারপতিদের বাইরে সবার কাছে গ্রহণযোগ্য একজনকে প্রধান করে একটি ১১ সদস্যের সরকারের কথা বিএনপি সর্বোচ্চ গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করছে। তবে সদস্য কমবেশিও হতে পারে। বিএনপি মনে করে, এ সরকারের মেয়াদ হবে ৯০ দিন। এ সময় তারা কোনো নীতিনির্ধারণী সিদ্ধান্ত নেবে না। দৈনন্দিন কাজ চালাবে।

এর বাইরে আরেকটি বিকল্প চিন্তা করা হচ্ছে, প্রধান দুই দল মিলে একজন ‘গ্রহণযোগ্য’ ব্যক্তিকে নির্বাচনকালীন সরকারের প্রধান হিসেবে ঠিক করবে। সংবিধানের বাধ্যবাধকতা ঠিক রাখতে প্রয়োজনে তাকে কোনো একটি আসন থেকে উপনির্বাচনে নির্বাচিত করে আনা হবে। একইভাবে অন্য সদস্যদেরও নির্বাচিত করা হবে।

দলের একটি সূত্র জানায়, একজন গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিকে প্রধান করে সংসদে প্রতিনিধিত্বশীল দলগুলোর সমন্বয়ে একটি নির্বাচনকালীন সরকার করা হলে বিএনপি মেনে নেবে। তবে সরাসরি এ ধরনের কোনো উপস্থাপনের পক্ষে নয় দলটি।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য বলেন, নির্বাচনকালীন সরকারের কাঠামো আছে। বিলুপ্ত হয়ে যাওয়া তত্ত্বাবধায়কই কাঠামো। তবুও বিষয়টি পরিষ্কার করার জন্য আমরা আনুষ্ঠানিকভাবে একটি প্রস্তাব দেব।

কী বলছে সংবিধান: সংবিধানের বিধান অনুসারে, বিদ্যমান সরকার ক্ষমতায় থাকতেই পরবর্তী সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এক্ষেত্রে নির্বাচনের আগে সংসদ ভেঙে গেলেও সরকারের ওপর তার প্রভাব পড়বে না। সংবিধানের ৫৭(৩) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ‘প্রধানমন্ত্রীর উত্তরাধিকারী কার্যভার গ্রহণ না করা পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রীকে স্বীয় পদে বহাল থাকিতে এই অনুচ্ছেদের কোনোকিছুই অযোগ্য করিবে না।’

সংবিধান বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এর অর্থ হচ্ছে যিনি একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হয়েছেন, তিনি নতুন একজন প্রধানমন্ত্রী দায়িত্ব না নেয়া পর্যন্ত স্বপদে বহাল থাকবেন। অর্থাৎ এ বিধান অনুসারে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে স্বপদে বহাল রেখেই নির্বাচন কমিশন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আয়োজন করবে। প্রধানমন্ত্রীর পাশাপাশি তার সরকারের মন্ত্রিসভার ক্ষেত্রেও সংবিধানের একই বিধান।

সংবিধানের ৫৮(৪) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ‘প্রধানমন্ত্রী পদত্যাগ করিলে বা স্বীয় পদে বহাল না থাকিলে মন্ত্রীদের প্রত্যেকে পদত্যাগ করিয়াছেন বলিয়া গণ্য হইবে; তবে এই পরিচ্ছেদের বিধানাবলী-সাপেক্ষে তাহাদের উত্তরাধিকারীগণ কার্যভার গ্রহণ না করা পর্যন্ত তাহারা স্ব স্ব পদে বহাল থাকিবেন।’

এ বিষয়ে সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ বলেন, সংবিধানে সহায়ক সরকার বা অর্ন্তবর্তীকালীন সরকারের কোনো বিধান নেই। গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ব্যবস্থায়ও এ ধরনের কোনো বিধান আছে বলে জানা নেই। সংবিধানে বলা আছে, কোনো সরকার নির্বাচন করবে না। নির্বাচন পরিচালনা করবে নির্বাচন কমিশন। আর নির্বাচনের সময় বর্তমান সরকারই দায়িত্বে থাকবে। সরকার ভোটের জন্য কর্মকর্তা নিয়োগসহ কমিশন যা চাইবে তা করতে বাধ্য থাকবে।

শেয়ার করুন .....




© 2018 allnewsagency.com      তত্ত্বাবধানে - মোহা: মনিকুল মশিহুর সজীব
Design & Developed BY ThemesBazar.Com