বৃহস্পতিবার, ১৬ অক্টোবর ২০২৫, ০৪:০১ পূর্বাহ্ন
নোয়াখালী সংবাদদাতা: সুদের টাকা দিতে না পারায় এক রিকশাচালকের বসতঘরে তালা ঝুলিয়ে দিয়েছে এক সুদি কারবারি। এতে রিকশাচালকের পরিবার গত আট দিন ধরে খোলা বারান্দায় অসহায় জীবনযাপন করছে।
শুক্রবার বিকেলে উপজেলার চরকিং ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ডের চরবগুলা গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।
ভুক্তভোগী রিকশাচালক একরাম হোসেন জানান, ২০১৫ সালে একটি সড়ক দুর্ঘটনায় আহত দুইজনের চিকিৎসার জন্য তিনি স্থানীয় সুদি কারবারি তোফায়েল আহমেদ থেকে সুদের ওপর ৬০ হাজার টাকা ঋণ নেন। ২০১৯ সালে আরও ১১ হাজার টাকা নেন। ২০২৩ সাল পর্যন্ত তিনি মোট ১ লাখ ৮৬ হাজার টাকা পরিশোধ করেছেন। এরপরও ঋণের বোঝা না কমায় তিনি ধারদেনা করে ক্লান্ত হয়ে পড়েন।
একরাম বলেন, “টাকা দিতে না পেরে আমি রাতের আঁধারে বাড়ি থেকে পালিয়ে যাই। কিছুদিন পর বাড়িতে ফিরলে তোফায়েল আমাকে তুলে নিয়ে মারধর করে এবং জোর করে ৩ লাখ ৩৩ হাজার টাকার স্ট্যাম্পে টিপসই নেয়।”
সম্প্রতি একরামের মা অসুস্থ হয়ে পড়লে তার স্ত্রী বাড়ির বাইরে যান। এই সুযোগে তোফায়েল ঘরে তালা মেরে দেয় এবং মালামাল বের করে নিয়ে যায়। তার স্ত্রী ফিরে এসে চাবি চাইলে তোফায়েল তা দিতে অস্বীকৃতি জানায়।
বর্তমানে একরামের পরিবার খোলা বারান্দায় মানবেতর জীবন কাটাচ্ছে। তাদের রান্নাবান্না বন্ধ, এবং তারা প্রতিবেশীদের দেওয়া সামান্য খাবার খেয়ে দিন পার করছেন। রিকশাচালকের স্ত্রী জানান, “বৃষ্টির কারণে ছোট ছোট বাচ্চাদের ঠান্ডা লেগে গেছে। আট দিন পর আজ পাশের বাড়ি থেকে পাতিল নিয়ে ভাত রান্না করেছি।”
স্থানীয় বাসিন্দা ও পল্লী চিকিৎসক আব্দুল হালিম বলেন, টাকার জন্য ঘরে তালা মেরে লোকজনকে বাইরে করে দেওয়া একটি অমানবিক কাজ। বৃষ্টির কারণে বাচ্চাদের ঠান্ডাজনিত সমস্যা দেখা দিয়েছে, কিন্তু তাদের কাছে ওষুধ কেনারও টাকা নেই।
অভিযুক্ত তোফায়েল আহমেদ তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ স্বীকার করে বলেন, সে আমার কাছ থেকে লাভের ওপর টাকা নিয়েছে। টাকা না দিয়ে সে দীর্ঘদিন ধরে পালিয়ে বেড়াচ্ছিল। কাউকে বাড়িতে না পেয়ে আমি তালা দিয়েছি। সে আমার টাকা পরিশোধ করলেই আমি তালা খুলে দেব।
স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান নাঈম উদ্দিন জানান, পাওনা টাকার জন্য কারো ঘরে তালা দেওয়া আইনত অপরাধ। গ্রাম পুলিশ পাঠিয়ে তালা খুলে দেয়ার ব্যবস্থা করা হচ্ছে।
ডেস্ক/এমএস